Friday 2 September 2016

প্রত্যকের অন্তত একবার হলেও এই জায়গাটা ঘুরে আসা উচিত, দেখুন কত সব বিচিত্র ও নান্দনিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছড়াছড়ি আমাদের দেশে


ঢাকা থেকে সুসং দুর্গাপুরে যাওয়ার এবং ফেরার জন্য সবচাইতে ভালো হবে নাইট কোচ বাস সার্ভিস। ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সুসং দুর্গাপুরে উদ্দেশ্যে নাইট কোচ সহ দিনে ও রাতে বেশ কিছু বাস ছেড়ে যায়। ভাড়া পড়বে ৩০০ টাকা। এই বাস আপনাকে সুসং দুর্গাপুর এর প্রাণকেন্দ্র তালুকদার প্লাজার সামনে নিয়ে নামাবে।
রাত ১২ টায় মহাখালী টার্মিনাল থেকে নাইট কোচ ছেড়ে যায়। আগে থেকে যোগাযোগ করে টিকিট বুকিং দিয়ে রাখবেন। আবার ঢাকা ফেরার জন্য দুর্গাপুরের প্রাণকেন্দ্র তালুকদার প্লাজার সামনে থেকে রাত এগারটায় এবং সাড়ে এগারটায় দুটি নাইট কোচ ঢাকার উদ্দ্যশ্যে ছেড়ে যায়। আপনি এখান থেকে টিকিট সংগ্রহ করে বাসে যেতে পারেন। ভোর পাঁচটার মধ্যেই মহাখালী পৌঁছে যাবেন। নির্ঝঞ্ঝাট এবং নিরাপদ ভ্রমন এর জন্য এটাই সবচেয়ে ভাল সাজেশান।

টিকিট বুকিং এর ফোন নাম্বারঃ
ঢাকা কাউন্টার: 01917710008 (এরশাদ)
সুসং দুর্গাপুর কাউন্টার: 01711669774 (শিপার)
যারা ঝটিকা সফর করতে চান তাদের জন্য সবচেয়ে ভাল হবে নাইট কোচে দুর্গাপুর এসে তালুকদার প্লাজার সামনে থেকে সারাদিনের জন্য বাইক ভাড়া করে(ভাড়া ৮০০/১০০) সবকিছু ঘুরে দেখে আবার নাইটকোচে ফেরত যাওয়া।
বিআরটিসির একটি স্পেশাল বাস প্রতিদিন বিকাল ৩.২০ তে কমলাপুর বিআরটিসি কাউন্টার থেকে ছেড়ে যায় যা ছয় ঘন্টার মধ্যে আপনাকে সুসং দুর্গাপুরের একবারে প্রানকেন্দ্র উকিলপাড়া মোড় এর তালুকদার প্লাজা/ অগ্রণী ব্যাংক এর সামনে পর্যন্ত নিয়ে যাবে।কিন্তু স্থানীয় পরিবহন রাজনীতির কারনে প্রায়ই বাসটির সার্ভিস বন্ধ থাকে।
আপনি ইচ্ছা করলে ময়মনসিংহ হয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গেও আসতে পারেন। অবশ্যি এতে ঝামেলা বেশি। “এনা” পরিবহন এর বাস মহাখালী হতে ময়মংসিংহ-এর মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যায়। এনা’র ভাড়া ২২০ টাকা। এছাড়া শেরপুর এবং ফুলবাড়িয়ার কিছু বাসে করে আপনি ময়মনসিংহ ব্রীজ পর্যন্ত আসতে পারবেন। ভাড়া ৯০/১০০ টাকা। তবে এক্ষেত্রে আপনি কাউন্টার থেকে না উঠে টারমিনাল এর বাইরে হতে বাসে উঠবেন। সেখান থেকে সিএনজি তে করে দুর্গাপুর বাজার তালুকদার প্লাজার সামনে এসে নামবেন। এই বাস গুলার ভাড়া কম এবং সার্ভিসও খুবই ভাল। তবে খরচ কমানোর জন্য সব বাস কিন্তু উপযুক্ত নয়। শুধু শ্যামলী বাংলা(শেরপুর), ইমাম(হালুয়াঘাট), এবং আলমএশিয়া(ফুলবাড়িয়া)। এছাড়া অন্য কোন বাসে ভুল করেও উঠবেননা।
মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ড থেকে অটোরিকশা বা রিকশা নিয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু (শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ নামে পরিচিত) মোড়ে চলে যাবেন, ব্রিজএর সামনে থেকে সুসং দুর্গাপুরে বাসে উঠে পড়লে পরের আড়াই/তিন ঘন্টা বসে বসে ঝাকি খাওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। এর পর সুসং দুর্গাপুরে পৌঁছালে নেমে রিকশায় গেস্ট হাউস এ। রাস্তা শ্যামগঞ্জ পর্যন্ত খুবই ভাল সুন্দর উন্নত এবং আরামদায়ক। শ্যামগঞ্জ থেকে ৩৫ কিলোমিটার রাস্তা কার্পেটিং ছাড়া। যদিও খানাখন্দ নাই খুবই ভারি ভারি বালু এবং কয়লার ট্রাক চলাচল করে বলে রাস্তা টেকেনা কিন্তু সবসময় ভেজা এবং সমান থাকে। বাস এর ভাড়া ৮০ টাকা। বাস থেকে সিএনজি ভ্রমন আরামদায়ক। সময় লাগে মাত্র দেড় ঘন্টা ভাড়া ১৫০ টাকা জন প্রতি। এক সিএনজি তে পাঁচ জন আসা যায়।
আরেকটা রুট আছে যা ট্যুরিস্টদের কাছে মোটামোটি ওজানাই এখনো। প্রাইভেটকার কিংবা মাইক্রো দিয়ে আসতে হলে আপনারা ময়মনসিংহ থেকে ধোবাউরা এবং ভেন্নাকান্দা চৌরাস্তা হয়ে শিবগঞ্জ বাজার দিয়ে একেবারে বিজয়পুরের বর্ডার সহ সব জায়গাতেই যেতে পারবেন। এতে আপনারা গাড়ি দিয়ে সরাসরি স্পটে যেতে পারবেন।
যারা ট্রেনে যেতে চান তাদের জন্যও ট্রেনের ব্যাবস্থা আছে। আন্তঃ নগর ট্রেনে ময়মনসিংহ পর্যন্ত যেতে পারেন এরপর আছে লোকাল ট্রেন জারিয়া এক্সপ্রেস ।ময়মনসিংহ পর্যন্ত রেল এর ভাড়া প্রথম শ্রেণী ১৮০ টাকা, চেয়ার কোচ ১৩০ টাকা এবং শোভন ১১০টাকা।
ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত পাঁচটি আন্তঃনগর ট্রেন চলে। কমলাপুর স্টেসন থেকে এগুলো যাত্রার সময়সূচি হলঃ
ট্রেনের নাম ছাড়ার সময় ময়মনসিংহ জংশনে পৌঁছে সাপ্তাহিক বন্ধ
তিস্তা এক্সপ্রেস সকাল ৭.২০ সকাল ১০.৪৫ - ১১.০০ সোমবার
অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস সকাল ৯.২০ দুপুর ১.০০ - ১.৩০ নাই
যমুনা এক্সপ্রেস বিকাল ৪.৪০ রাত্রি ৮.০০- ৮.৩০ নাই
ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস সন্ধ্যা ৬.০০ রাত্রি ১০.০০ নাই
হাওর এক্সপ্রেস রাত ১১.৫০ রাত ৩.০০ বুধবার রাত
ময়মনসিংহ ষ্টেশনে নেমে কাউন্টারে খোঁজ করে জারিয়া-ঝাঞ্জাইল এর লোকাল ট্রেনে উঠে জারিয়া এসে নামতে হবে।
ময়মনসিংহ হতে জারিয়া পর্যন্ত দিনে ৪ বার লোকাল ট্রেন চলাচল করে।
সকাল ৬ টায় , সকাল ১১ টায়, বিকাল ৪ টায় , রাত ৮ টায়।
ময়মনসিংহ হতে জারিয়া ট্রেন ভাড়া ১৮ টাকা। জারিয়া হতে দুর্গাপুর এর ভাড়া টমটম এ ২৫ টাকা , CNG তে ৪০ এবং মোটর সাইকেলে ৫০ টাকা প্রতি জন।
তিস্তা এক্সপ্রেসে আসলে সকাল ১১ টার জারিয়ার ট্রেন ধরতে পারবেন আর হাওর এ আসলে দু ঘন্টা স্টেশন এ বসে থেকে ভোর ৬ টার জারিয়ার ট্রেন ধরতে পারবেন। যমুনা এক্সপ্রেস এ আসলে রাতের ৮ টার ট্রেন কোন দিন পাওয়া যায় আবার কোন দিন পাওয়া যায়না।
জারিয়া স্টেশন হতে সকাল আটটায়, দুপুর একটায়, সন্ধ্যা ছয়টায় এবং রাত দশটায় ময়মনসিংহ স্টেশনের উদ্যেশ্যে লোকাল ট্রেন ছেড়ে যায়। গড়পড়তা সময় লাগে আড়াই ঘন্টা
আবার আপনি ইচ্ছা করলে নেত্রকোনার বাস কিংবা হাওর এক্সপ্রেসে করে শ্যামগঞ্জ এসে নামতে পারেন। ময়মনসিংহ থেকে তিন স্টেসন (ময়মনসিংহ-শম্ভুগঞ্জ- বিসকা-গৌরিপুর-শ্যামগঞ্জ) শ্যামগঞ্জ থেকে সিএনজি করেও দুর্গাপুর উকিল পাড়া মোড়ে তালুকদার প্লাজা/অগ্রণী ব্যাংক এর সামনে এসে নামবেন। ভাড়া ১০০-১২০ টাকা।
নতুন আগতদের জন্য সরাসরি বাস এ আসাই ভাল এতে ঝামেলা কম।
সুসং দুর্গাপুর বাজার থেকে রিক্সা বা মোটরসাইকেল নিয়ে সুনীল সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে, গারো পাহাড়, গোলাপী পাহাড়, নীল/সবুজ পানির লেক ঘুরে আসা যায়। সেখানে ভারত বাংলাদেশ বর্ডার ছাড়াও দেখার মতন রয়েছে একটা চার্চ ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ট্রেনিং নেয়ার জন্য তৈরী কয়েকটা পিলার । সারাদিনের জন্য রিক্সা ভাড়া পড়বে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে (যার থেকে যা রাখতে পারে)। রিক্সা আপনাকে খুঁজতে হবেনা, রিক্সাই আপনার হোটেলে এসে বসে থাকবে। আর মোটর সাইকেল ভাড়া পাওয়া যাবে তালুকদার প্লাজা/ অগ্রণী ব্যাংক এর সামনে থেকে।
শীত কালে যখন পানি কম থাকে তখন সোমেশ্বরী নদীতে হাটু পানিতে নেমে হাটা হাটি করবেন। ফিলিংস টা দুর্দান্ত হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
আপনারা যারা চিনামাটির পাহাড়, গারো পাহাড় বা সোমেশ্বরী নদী বলতে বিরিশিরি বুঝেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, বিরিশিরি একটি ইউনিয়ন। দূর্গাপুর থানার একটি ইউনিয়ন বিরিশিরি । চিনামাটির পাহাড় ,রানিখং , সীমান্ত , সোমেশ্বরী নদী আরও যা দেখবেন সবই দূর্গাপুর থানার অন্তর্গত এবং অন্যান্য ইউনিয়ন এ । এবং আপনি বিরিশিরি ইউনিয়নের কোন কিছুতেই ঘুরবেন না - ফসলি মাঠ আর চোলাই মদ এর কারখানা ছাড়া বিরিশিরিতে আর কিছুই নেই - বেড়াতে যান দূর্গাপুর কিন্ত নাম হয় বিরিশিরির'র - বিরিশিরি তে বাস / নসিমন এসে থামে - এতটুকুই।
দুর্গাপুর থেকে ঢাকাঃ
ঢাকা ফেরার জন্য দুর্গাপুরের প্রাণকেন্দ্র তালুকদার প্লাজার সামনে থেকে রাত এগারটায় এবং সাড়ে এগারটায় দুটি নাইট কোচ ঢাকার উদ্দ্যশ্যে ছেড়ে যায়। আপনি এখান থেকে টিকিট সংগ্রহ করে বাসে যেতে পারেন। ভোর পাঁচটার মধ্যেই মহাখালী পৌঁছে যাবেন। নির্ঝঞ্ঝাট এবং নিরাপদ ভ্রমন এর জন্য এটাই সবচেয়ে ভাল সাজেশান।
দুর্গাপুর থেকে ঢাকা ফেরত যাওয়ার সময় ট্রেনে যাওয়ার চিন্তা কখনই করবেননা। ময়মনসিংহ থেকে আপনি কখনো ঢাকার আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট পাবেননা। প্রতিদিন সকাল ৬.২০ এ সুসং দুর্গাপুরের একবারে প্রানকেন্দ্র উকিলপাড়া মোড় এর তালুকদার প্লাজা/ অগ্রণী ব্যাংক এর সামনে থেকে বিআরটিসি বাস ছাড়ে। অগ্রিম টিকিট এর জন্য কাউন্টার/এজেন্ট তামিম টেলিকম এ যোগাযোগ করে রাখবেন।
দুর্গাপুর থেকে পাহাড়ে যাওয়ার উপায়ঃ
বিজয়পুর, রানীখং, বিজিবি ক্যাম্প এসব ঘুরতে রিক্সা অথবা মোটর সাইকেল ভাড়া করতে হবে। সোমেশ্বরী নদী পাড় হয়ে ওপাশে যেতে হবে। নদী পাড় হতে নৌকাকে দিতে হবে জনপ্রতি ৫ টাকা। আর মটর সাইকেল এর জন্য ১০ টাকা। মটর সাইকেল এ গেলে সব ঘুরে আসতে ৬ ঘন্টা মত সময় লাগবে। ১ টা মটর সাইকেলে ২ জন এর ভাড়া পড়বে ৭০০-১০০০ টাকা। আর রিক্সায় গেলে ২ জন এ খরচ পড়বে ৬০০-৮০০০ টাকা(যার কাছ থেকে যত রাখতে পারে)। ফিরতে সময় লাগবে ৮ ঘন্টা মত। তবে বর্ডারের রাস্তা ঘাট খুব সুবিধের না হওয়ায় মাটর সাইকেলে গেলেই ভাল হবে। আর ভবানিপুর ডাহাপাড়া যেতে হলে আত্রাখালি ঘাট হতে রিক্সা নিয়ে যাওয়া যায়। ১-১.৫ কিলোমিটার রাস্তা। চাইলে প্রাকৃতিক মনোরম সৌন্দর্য দেখতে দেখতে হেটেও যেতে পারবেন।
থাকার ব্যবস্থাঃ
সুসং দুর্গাপুরে থাকার জন্য ভাল মানের বেশ কয়েকটি গেস্ট হাউস আছে। নিম্নে এদের নাম এবং কন্টাক্ট নাম্বার দেয়া হল-
জেলা পরিষদ ডাক বাংলা: 01558380383, 01725571795
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমী গেষ্ট হাউজ। ফোনঃ 09525-56042; মোবাইলঃ 01815482006

ঢাকা থেকে সুসং দুর্গাপুর যাওয়ার উপায়ঃ
ইয়ুথ মেন খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াইএমসিএ-এর রেস্ট হাউস।: 01818613496, 01716277637, 01714418039, 01743306230, 01924975935, 01727833332। এখানকার কক্ষ ভাড়া ৩০০-৫০০ টাকা।
YWCA গেষ্ট হাউজ: 01711027901,।YWCA এর জন্য ‘অমিতা সাংমা – ০১৭১২০৪২৯১৬’
রুম ভাড়া পড়বে ৭৫০ টাকা (২ বেড) আর চাইলে VIP রুম এর ব্যাবস্থাও করতে পারেন। এদের বিরাট একটা হলরুম আছে যেখানে একসাথে ১৮ জন থাকতে পারবে, সেক্ষেত্রে পার বেডে খরচ পড়বে ২০০ টাকা করে। YWCA এর ছাদটা সবচাইতে সুন্দর, সেখান থেকে পূর্ণিমা দেখতে অসাধারণ লাগে
অন্যান্য গেস্ট হাউসঃ
এছাড়া দুর্গাপুরে আরও কিছু মধ্যম মানের হোটেল আছে,
স্বর্ণা গেস্ট হাউস ………………………………………01712284698, ০১৭২৮৪৩৮৭১২
হোটেল সুসং ……………………………………………০১৯১৪৭৯১২৫৪
হোটেল গুলশান ……………………………………….০১৭১১১৫০৮০৭
হোটেল জবা. …………………………………….01711186708, 01753154617
নদীবাংলা গেষ্ট হাউজ …………………………...01771893570, 01713540542)
এসব হোটেলে ১৫০-৪০০ টাকার মধ্যে থাকার ব্যাবস্থা আছে।
আপনি বনে জঙ্গলে থাকতে এসে পাচ তারকা হোটেল এর সার্ভিস আশা করতে পারেন না। তবে আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি তাদের আন্তরিকতা এবং সেবা আপনাদের ভাল লাগবেই।
খাওয়া দাওয়াঃ
খাওয়া দাওয়ার ব্যাবস্থা নিয়ে আপনাদের একেবারেই চিন্তা না করলেও চলবে। যে গেস্ট হাউস এ থাকবেন তারাই সুলভ মুল্যে ভাল খাবারের ব্যাবস্থা করে দিবে। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংক/ তালুকদার প্লাজার সামনে অবস্থিত হোটেল শান্ত এবং হোটেল পুস্প তে ভাল মানের এবং সুলভ মুল্যে খাবার পাওয়া যায়।
সুসং দুর্গাপুরে দেখার কি কি আছেঃ
সুসং দুর্গাপুর। নেত্রকোনা জেলার উত্তর প্রান্তে গারো পাহাড়ের পাদদেশের এক জনপদের নাম। যেখানে বয়ে গেছে টলটলে জলের সোমেশ্বরী আর দিগন্ত হারিয়েছে আকাশ ছোঁয়া সবুজ পাহাড়ে। ছোট্ট একটি জায়গা যার পরতে পরতে জড়ানো সৌন্দর্য।
সুসং দুর্গাপুরের দর্শনীয় স্থান সমুহঃ
গারো পাহাড়ঃ
গারো পাহাড় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো-খাসিয়া পর্বতমালার একটি অংশ। এর কিছু অংশ ভারতের আসাম রাজ্য ও বাংলাদেশের নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ জেলায় অবস্থিত। গারো পাহাড়ের বিস্তৃতি প্রায় ৮০০০ বর্গ কিলোমিটার।
সুসং দুর্গাপুরের জমিদার বাড়িঃ
এক সময় দুর্গাপুর ছিল সুসং রাজ্যের রাজধানী। ৩ হাজার ৩শ' ৫৯ বর্গমাইল এলাকা ও প্রায় সাড়ে ৯শ' গ্রাম নিয়ে প্রতিষ্ঠিত সুসং রাজ্যের রাজধানী ছিল দুর্গাপুর। বর্তমানে এটি নেত্রকোনার একটি উপজেলা। সোমেশ্বর পাঠক থেকে শুরু করে তাঁর পরবর্তী বংশধররা প্রায় ৬৬৭ বছর শাসন করেন এ রাজ্য। কিন্তু রাজকৃষ্ণ নামে এক রাজার শাসনামল থেকে সুসং রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রাজপরিবারে বিরোধের সূত্রপাত হয়। ফলে এক সময় গোটা রাজ্য চারটি হিস্যায় ভাগ হয়ে যায় এবং চারটি পৃথক রাজবাড়ি প্রতিষ্ঠিত হয়। বাড়িগুলো 'বড় বাড়ি', 'মধ্যম বাড়ি', 'আবু বাড়ি' (ছোট অর্থে) ও 'দু'আনি বাড়ি' নামে পরিচিত ছিল।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমীঃ
দুর্গাপুরের বাসস্ট্যান্ড এর পাশেই অবস্থিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমী । এ অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবন যাত্রার নানা নিদর্শন সংরক্ষিত আছে এখানে। সু
টংক আন্দোলনের স্মৃতিসৌধঃ
১৯৪৬-৫০ সালে তখনকার জমিদার বাড়ির ভাগ্নে কমরেড মণিসিংহের নেতৃত্বে জমিদারদেরই বিরুদ্ধে শুরু হয় টঙ্ক আন্দোলন।
টঙ্ক আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ, দুর্গাপুর
টংক আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে নির্মিত হয় স্মৃতিসৌধ। সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে কিছ দূর গেলে এম.কে.সি.এম হাই স্কুলের পাশে গেলেই চোখে পড়বে এ স্মৃতিসৌধটি। মরহুম রাজনীতিবিদ জালাল উদ্দিন তালুকদারের দানকৃত জমিতে এ স্মৃতিসৌধটি নির্মিত হয়। প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বর কমরেড মণিসিংহের মৃত্যু দিবসে এখানে পাঁচ দিনব্যাপী মণিসিংহ মেলা নামে লোকজ মেলা বসে।
সাধু যোসেফের ধর্মপল্লীঃ
সুসং দুর্গাপুর থেকে সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে রিকশায় যেতে হয় রানিখং গ্রামে। এখানে আছে সাধু যোসেফের ধর্মপল্লী। রানিখং গ্রামের এ ক্যাথলিক গির্জাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯১২ সালে।
হাজং মাতা রাশিমণি স্মৃতিসৌধঃ
দুর্গাপুর বাজার থেকে বিজয়পুর পাহাড়ে যাওয়ার পথে কামারখালী বাজারের পাশে বহেরাতলীতে অবস্থিত রাশিমণি এই স্মৃতিসৌধ।
সীমান্তবর্তী, গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ‘বগাঝরা’ নামক গ্রামটি ছিল ব্রিটিশবিরোধী গ্রামগুলোর মধ্যে একটি।রাশিমণি সেই গ্রামেরই একজন প্রতিবাদী মানুষ ছিলেন।ব্রিটিশ মহাজন ও জোতদারদের অন্যায় নীতির বিরুদ্ধে তিনি রুখে দাঁড়ান এবং হয়ে ওঠেন টংক আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী।
সাদা মাটির পাহাড়ঃ
দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে কুল্লাগড়া ইউনিয়নের আড়াপাড়া ও মাইজপাড়া মৌজায় বিজয়পুরের শসার পাড় এবং বহেরাতলী গ্রামে সাদা মাটি অবস্থিত। এখান থেকে চীনা মাটি সংগ্রহের ফলে পাহাড়ের গায়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট ছোট পুকুরের মতো গভীর জলাধার। পাহাড়ের গায়ে স্বচ্ছ নীল রঙের জলাধার গুলো দেখতে অত্যন্ত চমৎকার।
সোমেশ্বরী নদী
সোমেশ্বরী নদী স্বচ্ছ পানি আর ধুধু বালুচরের জন্য বিখ্যাত। সোমেশ্বরী নদী বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলায় প্রবাহিত একটি নদী। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়ের বিঞ্চুরীছড়া, বাঙাছড়া প্রভৃতি ঝর্ণাধারা ও পশ্চিম দিক থেকে রমফা নদীর স্রোতধারা একত্রিত হয়ে সোমেশ্বরী নদীর সৃষ্টি। ।
কংশ নদীঃ
কংশ নদী ভারতের মেঘালয় ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত হয়েছে। ভারতের শিলং মালভূমির পূর্বভাগের তুরার কাছে গারো পাহাড়ে এই নদীটির উৎপত্তি।
আত্রাখালি নদী
আত্রাখালি নদী সুসঙ্গ দুর্গাপুর বাজারের উত্তর দিক দিয়ে সোমেশ্বরী নদী থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়েছে। কিছু দূর এগিয়ে সোমেশ্বরীর মূলধারা সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
Like us... Sylhet & Coxsbazar Tourist Spots
courtesy- Salehin Arshady·
লিখাঃ রাহাত জামান অভি