Saturday 25 February 2017

সিলেট এর কিছু দর্শনীয় স্থান SYLHETY TRAVELLING SPOT

পারিবারিক সিলেট ভ্রমনের ইতিবৃত্ত
(পড়ে নিতে পারেন, অনেক কিছু জানতে পারবেন শিউর)
যারা এখনো সিলেট যাবার প্ল্যান করছেন কিন্তু নানা ব্যস্ততার কারনে যাওয়া হয়ে উঠছে না তাদের বলছি আর দেরী করা বোধহয় ঠিক হবে না।
হ্যাঁ। আমি জানি সিলেটের পূর্ণ রূপ দেখতে বর্ষাকাল শ্রেয় তারপরও খারাপ লাগবে না এ নিশ্চয়তা আমি দিতে পারি।



আর কথা না বলে ট্যুর প্ল্যানটা বলি বরং।

১ম দিনঃ লালাখাল + শ্রীপুর + জাফলং
২য় দিনঃ মাজার + মালিনীছড়া + সাস্ট
৩য় দিনঃ টাঙ্গুয়ার হাওর + টেকেরঘাট + নীলাদ্রি
৪র্থ দিনঃ রাতারগুল + বিছানাকান্দি
৫ম দিনঃ লাউয়াছড়া + শ্রীমঙ্গল
বলে রাখা ভাল, এই প্ল্যান করে গিয়েছি চট্টগ্রাম থেকেই অনেক বুজুর্গ ব্যক্তির পরামর্শে যাদের সাথে পরিচয় এই #TOB এ।
প্রথম গিয়েছি।
কোন ধারনাই ছিল না সিলেট সম্পর্কে। তাই যাওয়ার পর একটু ওলট পালট হয়েছে পরিকল্পনায়।
১ম দিনঃ
প্ল্যান ছিল জাফলং, লালাখাল আর শ্রীপুর।
গিয়ে পৌঁছেছি আগের দিন রাতে। সো সেদিন সিলেটে প্রথম। চৌমাথা থেকে সিএনজি ভাড়া করি পুরো দিনের জন্য। বলা হয় জাফলং, লালাখাল আর শ্রীপুর ঘুরিয়ে আনবে সন্ধ্যার মধ্যে। কথা রেখেছিল সে। উপরি হিসেবে জৈন্তাপুর আর স্টেডিয়ামও ঘুরে দেখালো।
ভাড়া বাবদ খরচ ১৯৫০টাকা।
২য় দিনঃ
প্ল্যান ছিল টাংগুয়ার হাওড়, টেকের ঘাট আর নীলাদ্রি।
একটু দেরী হয়ে যায় এদিন বেরুতে। খেসারত দিতে হয় তার। সুনামগঞ্জ পৌঁছাতেই ১১টা বেজে যায়। সিএনজি সিন্ডিকেট এড়ানোর অনেক চেষ্টা করেও সফল হইনি শেষ পর্যন্ত। সবচেয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার স্বীকার হই এদিন। দরদাম করে লোকালে উঠেছিলাম প্রতিজন ৮০ টাকা। সেখানে গিয়ে কথা উল্টিয়ে ফেলে সে। তেমন কোন কথায় নাকি সে বলে নি।
যাই হোক, বোট ভাড়া করেছিলাম ৭০০টাকায়। প্রায় ৫ ঘন্টায় পুরোটা হাওড়ের সবকিছু অনুভব করেছিলাম প্রানভরে। বিশেষ করে, ওয়াচ টাওয়ারের উপর থেকে বিকেলের হাওড় আমার জীবনে দেখা সেরা দৃশ্যের একটি। কথায় কথায় কিশোর মাঝির কাছ থেকে জানতে পারি, নীলাদ্রি আর টেকের ঘাট যেতে নাকি একদিন থাকতে হয় বোটে। আমাদের জানা ছিল না। প্রস্তুতিরও অভাব। এ দফায় তাই দিন থাকতেই ফিরে এলাম ঘাটে।
ভাড়া বাবদ খরচ ২৫৫০টাকা
৩য় দিনঃ
প্ল্যান ছিল রাতারগুল আর বিছানাকান্দি।
আজ থেকে শুরু হয় দুই ভাইয়ের জার্নি। আম্বরখানা থেকে ১২০টাকা করে লোকাল সিএনজিতে করে হাদারপাড়। সেখান থেকে ১০০টাকার বাইকে করে বিছানাকান্দি। জৌলুস হয়তো বর্ষার মত নেই। কিন্তু খুব একটা খারাপ লাগেনি আমার। সেখানে পেয়ে গেলাম ৪জনের আরো এক দল। ওদের সিএনজি ভাড়া করাই ছিল। গ্রুপে শেয়ার করা রাতারগুলের কিছু ছবি দেখিয়ে ইম্প্রেস করা আর তারপর সেই সিএনজি করে রাতারগুল। খুব বেশিক্ষণ থাকার ভাগ্য ছিল না। সুর্য্যি মামা ডুবুডুবু। যতটা সম্ভব শাটার স্পিড কমিয়ে ক্লিক চলল ওয়াচ টাওয়ারের উপর থেকে।
ভাড়া বাবদ খরচ ১২১০টাকা
৪র্থ দিনঃ
বাকি ছিল শুধু সাস্ট আর মাজার।
ভোর ছ-টায় বেরিয়ে পড়ি হোটেল থেকে। আশা ছিল, কুয়াশা পাব ক্যাম্পাসে। পাইনি। ১০টার মধ্যে রুমে ফিরি। গোসল করেই চলে যায় মাজারে। দুপুরে হোটেল ছেড়েই চড়ে বসি শ্রীমঙ্গলের বাসে।
ভাড়া বাবদ খরচ ১৪০টাকা
৫ম দিনঃ
প্ল্যান ছিল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান আর চা-বাগান দেখার।
এই একটা জায়গাতেই গিয়ে হতাশ হয়েছি। কয়েকটা বানর ছাড়া কিছুই দেখিনি আর। সবাই যা করে রেল রাস্তার উপরে বসে ছবি তুলেছি। Around the World in 80 Days এর একটা শট নাকি এখানে নেয়া হয়েছিল। আসার পথে চা বাগানেই নেমে যাই। ইচ্ছামত ছবি তুলে দীর্ঘ ভ্রমনের ইতি টানি।
ভাড়া বাবদ খরচ ৩০০টাকা।
কিছু পরামর্শ এখানে উল্লেখ্য----
* সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন মাজার থেকে দূরে হোটেল নিতে। খরচটা বাঁঁচবে। আমরা থেকেছি তালতলার হোটেল গুলশানে।
* সিএনজিওয়ালার ভূগোলে ভুলবেন না। কথা সাফ করে পারলে রেকর্ডিং করে নিবেন। টাকা আপনি দিবেন। পারলে আগে থেকে ভাড়াটা জেনে নিন। ঠকবেন কম।
* লালাখালে সিন্ডিকেটের হাত থেকে বাঁচতে চাইলেঃ এমন ভাব ধরুন যেন নৌকায় চড়ার ইচ্ছেই নেই। একটা ডিঙি নৌকা দেখবেন এপাড়ে দাঁডিয়ে আছে। ওটায় উঠে পড়ুন। খালের অন্য পাড়ে নিয়ে যাবে। এবার দেখবেন সে পাড়ে ২/৩টি বড় নৌকা বাঁধা আছে। ওদের সাথে কথা বলুন। ৭০০টাকার নৌকা ভাড়া আমরা করেছি ২৫০টাকায়। ঘুরেছি ১ঘন্টারও বেশি।
* টাংগুয়ার হাওড়ের সিন্ডিকেট থেকে বাঁচতে চাইলেঃ দল বেঁধে ঘাটে যান। এখানে সিরিয়াল নেই। দেখবেন আপনাদের নিয়ে কাড়াকাড়ি লেগে গেছে। কোথাও যাবেন না। ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকুন। সবাই আপনাদের ঘিরে ধরবে। উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে জিজ্ঞেস করুন ওয়াচ টাওয়ার ঘুড়িয়ে আনতে কত নিবে। এবার মজা। দেখবেন তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা লেগে গেছে কে কার চেয়ে কম ভাড়ায় নিবে। নৌকা দেখে উঠে পড়ুন এবার।
* খরচটা উল্লেখ করলাম না। ফ্যামিলি ট্যুর। বোঝেনই তো!
কার্টেসী- জয় গানওয়ালা