Wednesday 26 April 2017

২০০০ টাকায় ভারত ভ্রমণ…!! (ঢাকা-শিলিগুড়ি-মিরিক-শিলিগুড়ি-ঢাকা)

অবাক হচ্ছেন উপরের শিরোনাম দেখে?
হ্যাঁ হবারই কথা, স্বাভাবিক ভাবেই। আসলে হয়েছে কি ভ্রমণে কে, কিভাবে কোন খাতে কত টাকা খরচ করবে সেটা কিন্তু একান্তই তার বা তাদের ব্যাক্তিগত ব্যাপার।
এই যে, এখন যে ভ্রমণের গল্পটি সংক্ষেপে বলবো সেই গল্পতেও খরচ ২০০০ টাকার পরিবর্তে ২০,০০০ টাকাও করা সম্ভব! হ্যাঁ আসলেই সম্ভব। শুধু দৃষ্টি ভঙ্গির পার্থক্য হলেই, সাথে একটু বেশী আরাম-আয়েশ আর এটা-সেটা করলে তো হবেই তাইনা?
যাই হোক ফালতু কথা না বলে এবার সরাসরি চলে যাই মূল গল্পে, কিভাবে মাত্র ২০০০ টাকায় ঘুরে এলাম ভারতের শিলিগুড়ি আর মিরিক? চলুন শুনি?
অনেকেই আমার ঘুরে আসার পরে ট্যুর প্ল্যান চেয়েছে, তাদের পাশাপাশি অন্য সকল অল্প খরচে ভ্রমণ পাগলদের জন্য এই লেখা।এবার এই ভ্রমণের মূল উদেশ্যই ছিল, কত কম খরচে আর কম সময়ে ভারতের একটা নান্দনিক জায়গা উপভোগ করে আসা যায়? আর নতুন যে পোর্ট দিয়ে (বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি) যাবো সেটার সুবিধা-অসুবিধা কি আর কেমন? তাই এই সংক্ষিপ্ত ভ্রমণের একান্ত আয়োজন।
শুরু হল যাত্রা, ঢাকা থেকে রাত ১০ টায় নাবিল পরিবহনে ৬৫০ টাকায় পঞ্চগড় পৌঁছলাম সকাল ৭ টায়। পঞ্চগড় থেকে ৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে লোকাল বাসে বাংলাবান্ধা সকাল ৯:৩০। মাঝে ৩০-৪০ মিনিট লোকাল বাসের সিস্টেম লস।
ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এর বৈতরণী পেরিয়ে ১১ টায় ফুলবাড়ি বাস স্ট্যান্ড। উল্লেখ্য দুই পারের দুই সীমান্তে কিছু টাকার সিস্টেমলস হয়েছে, সেটা চাইলেই এড়ানো যেত, কিন্তু যেহেতু প্রথমবার একা একা অন্য কোন দেশে ভ্রমণ করতে যাচ্ছি, আবার একা একাই ফিরতে হবে এই পোর্ট দিয়ে এবং আর তেমন কোন যাত্রী ছিলোনা, তাই কোন রকম ঝামেলায় না গিয়ে অল্প কিছু টাকার বিনিময় নির্ঝঞ্ঝাট থাকতে চেয়েছি। তাই সেই অযৌক্তিক খরচকে ভ্রমণের অন্তর্ভুক্ত করা হলনা। কারণ এই খরচ, ব্যাক্তি ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে।
এরপর ফুলবাড়ি থেকে লোকাল বাসে ১০ রুপী দিয়ে শিলিগুড়ি, সেখান থেকে শেয়ারে ভাড়া করা জীপে করে ১০০ রুপীতে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা, মেঘে ঢাকা, চা বাগানের নান্দনিকতায় ঘেরা, গভীর অরণ্য ভেদ করে ছুটে চলা মিরিক ১২:৩০ এ।পরের চার ঘণ্টা, মানে ৪:৩০ পর্যন্ত মিরিকের লেক, নান্দনিক সুইস কটেজ, সবচেয়ে উঁচু চুড়া, হ্যালিপ্যাড, মেঘ-কুয়াশা-নীল আকাশ, একটু দূরেই পাহাড়ে পাহাড়ে নেপালি গ্রাম, কারশিয়াংদার্জিলিং এর পাহাড়, আকাশ পরিস্কার আর মেঘ মুক্ত থাকলে, সাথে যদি থাকে ভাগ্যের পরশ তো দূরে দাঁড়িয়ে থাকা বরফে মোড়া রঙিন কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা পাওয়া… সারাদিনের অল্প ভ্রমণে আর কি চাই?
এরপর বিকেল ৪:৩০ এর শেষ শেয়ার জীপের ছাদে উঠে (নিচে সিট না পাওয়ায়) ৭০ রুপীতে শিলিগুড়ি। শিলিগুড়ি ফিরে ৪০০ রুপীতে একটি রুম নিয়ে (যথেষ্ট ভালো) ফ্রি ওয়াই-ফাই সহ। ব্যাগ রেখে ফ্রেস হয়ে, ব্যাক্তিগত কাজে বেরিয়ে পরা। কাজকর্ম সেরে, ১২০ রুপীতে আচ্ছামত মাটন বিরিয়ানি খেয়ে, আর সেহেরীর জন্য ১০ রুপীর জিলাপি নিয়ে রুমে ফিরে, নেটে বুদ হয়ে যাওয়া।ক্লান্তির কাছে পরাজিত হয়ে, ঘুমের কাছে নিজেকে বিসর্জন দিয়ে দেয়া। সকালের ঝুম বৃষ্টিতে একবার ঘুমে হারিয়ে, নেটে ডুবে থেকে বেলা ১২:৩০ টায় রুম ছেড়ে, ব্যাগ হোটেলের রিসেপসনে রেখে বেরিয়ে পরা। বিকেল তিনটা পর্যন্ত ঘুরে-ঘুরে ক্লান্ত হয়ে হোটেলে ফিরে একটু ফ্রেশ হয়ে, কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে, হোটেলের সাথে লাগোয়া রাস্তা থেকেই ফুলবাড়ির অটোতে ওঠা! ভাড়া সেই ১০ রুপী আর সময় ১৫-২০ মিনিট!
আবারও ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমস এর আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ৪ টায় বাংলাবান্ধা। লোকাল বাস বা ভাগ্যক্রমে পেয়ে যাওয়া মাইক্রোতে করে ৬০ টাকায় পঞ্চগড়! আর ফেরার সময় ৬০০ টাকায় ঢাকায়! বেড়াতে গিয়েছিলাম গত বছর রোজার সময়ে। ফেরার সময় ইফতারি আর রাতের খাবার এক ভ্রমনপ্রিয় বন্ধুর বাড়িতে আন্তরিক আতিথিয়তা! সেই গল্প অন্য একদিন বলবো।
আর ঢাকায় ফিরে সকল বন্ধু ও সহকর্মীকে মাত্র ২০০০ টাকায় ভারত ঘুরে আসার অবিশ্বাস্য কীর্তির অহমিকা দেখানো…!!
এই হল আমার সম্প্রতি মাত্র ২০০০ টাকায় ভারত (ঢাকা-শিলিগুড়ি-মিরিক-শিলিগুড়ি-ঢাকা) ঘুরে আসার সংক্ষিপ্ত গল্প……
সবার ভ্রমণ সুন্দর, সুখময়, স্বল্প খরচের আর উপভোগ্য হোক!